ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫ , ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ফের আইটেম গানে নাচবেন তামান্না সম্মানসূচক পাম ডি’অর পাচ্ছেন রবার্ট ডি নিরো মালাইকার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি সিআইডিতে আসছে নতুন এসিপি বাংলাদেশে আসছেন পাকিস্তানি গায়িকা আইমা বেগ হলে বাড়লো জংলির শো ছেলেকে নিয়ে ছুটি কাটাতে সিঙ্গাপুরে অপু নতুন ছবি নিয়ে পর্দায় আসছেন মোশাররফ করিম সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নির্দেশ মাউশির ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘরে ঢ়ুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা মোদির মতো নেতাকে ছুড়ে ফেলার বিকল্প নেই -সারজিস আট মাসের শিশুকে অপহরণের পর বিক্রি, ৮ দিন পর যশোর থেকে উদ্ধার ঈদযাত্রার ১১ দিনে সড়কে ঝরল ২৪৯ প্রাণ নওগাঁ বাড়ির ভেতরে মিললো ভাইবোনের মরদেহ পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ নয় জাটকা সংরক্ষণের আহ্বান মৎস্য উপদেষ্টার ডিজিএফআই কর্মকর্তা হত্যা মামলায় আরসা প্রধানসহ ১০ জন কারাগারে মার্চে ৪৪২ নারী নির্যাতনের শিকার, ধর্ষণ ১৬৩ -মহিলা পরিষদ ১০ এপ্রিলের মধ্যে যোগদানের নির্দেশ প্রধান শিক্ষকদের বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে স্টার্টআপ খাতে ৯০০ কোটি টাকার তহবিল সবার অংশগ্রহণে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের প্রচেষ্টা -আলী রীয়াজ
অধিকাংশ খাবারের হোটেল বন্ধ, বিপাকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ

ঈদের ছুটিতে খাবার কষ্টে ব্যাচেলররা

  • আপলোড সময় : ০৫-০৪-২০২৫ ০৩:২৩:৪৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৫-০৪-২০২৫ ০৩:২৩:৪৭ অপরাহ্ন
ঈদের ছুটিতে খাবার কষ্টে ব্যাচেলররা
পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে বাড়ি ফিরেছেন প্রাচ্যেও নগরী হিসেবেখ্যাত ঢাকা অধিকাংশ মানুষ। এতে ঈদের আগে-পরে জনশূন্য হয়ে পড়ে রাজধানী। ফলে দোকানপাট-বাজার এবং বিশেষ করে রেস্টুরেন্টগুলো অধিকাংশই বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে না যাওয়া ব্যাচেলররা। এসব ব্যাচেলররা প্রতিদিনের খাবারের জন্য বাসার কাজের বুয়া, চুক্তিভিত্তিক খাবার অথবা রেস্টুরেন্টের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তবে অধিকাংশ খাবারের হোটেলে রান্না বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পরিবার থেকে বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং দুর্ভোগে পড়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা যায়।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, পান্থপথ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অলিগলির খাবারের দোকানসহ প্রায় সব দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। শুধু অলিগলিতেই নয়, প্রধান সড়কের পাশের খাবারের হোটেলগুলোও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া কিছু খাবারের হোটেল বন্ধ রেখেই সংস্কার কাজ করতে দেখা গেছে। তবে কিছু কিছু খাবারের দোকান খোলা থাকলেও তা পর্যাপ্ত নয়। আগামী ২/১ দিনের মধ্যে বন্ধ খাবারের দোকানগুলোও দোকানিরা খুলবেন বলে জানা যায়। এতে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় ব্যাচেলরদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা অনেক কঠিন। যাদের বাসায় রান্নার সুবিধা নেই কিংবা যারা নিয়মিত বাইরের খাবারের ওপর নির্ভর করেন, তারা একপ্রকার অনাহার বা অর্ধাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হন। স্থানীয় মুদি দোকান বা সুপার শপগুলো খোলা থাকলেও, সেখানে প্যাকেটজাত খাবারের বাইরে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই শুকনো খাবার বা নুডলসেই সারছেন নিজেদের আহার। তবে গত কয়েকদিনের তুলনায় গতকাল শুক্রবার দু-একটা রেস্টুরেন্ট খোলার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু গত দুই দিন সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। বুয়া তো ঈদের আগেই চলে গিয়েছিল। অনেক সমস্যা হয়ে গেছে। এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পুরানা পল্টন, মালিবাগ, বছিলা, পশ্চিম তেজতুরী বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একই চিত্র দেখা যায়। শুধু হোটেল-রেস্তোরাঁও নয়, অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ঢাকার পল্টন, মতিঝিল, বাড্ডা এলাকায় কোনো রেস্টুরেন্ট চালু ছিল না। মহল্লার অলিগলির রেস্টুরেন্টগুলোও বন্ধ ছিল। দু-একটি রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলেও, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ছিল না, ফলে খাবারের জন্য খুঁজতে খুঁজতে ঢাকায় থাকা ব্যাচেলরদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি একটি মেসে থাকি। প্রতিদিন দুপুরে বাইরে খাই, রাতে খাবার আসে। ঈদের সময় সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ, অনেক খুঁজে খুঁজে দূরে একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম। আবার রাতের খাবারের কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। পুরো ঈদের সময়টা এভাবেই কাটাতে হবে, এটা বেশ কষ্টকর। ঈদের ছুটিতেও যারা বাড়ি যাননি, বা যেতে পারেননি, তাদের অবস্থাও প্রায় একই। ঢাকায় মেস বা ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীরা রান্না করতে পারেন না, এবং ঈদের ছুটিতে তাদের বন্ধু-সহপাঠীরা অধিকাংশই গ্রামে চলে যান। ফলে খাবারের অভাবে তাদের সময়টা হয়ে ওঠে অত্যন্ত দুর্বিষহ। অনেকেই বন্ধুদের বাসায় গিয়ে খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেন, আবার কেউ কেউ ফাস্টফুডের ওপর নির্ভর করেন, কিন্তু পুরো ছুটির সময় কাটানো একেবারেই কষ্টকর হয়ে পড়ে। বুয়া না আসা মেসে থাকা ব্যাচেলরদের জন্য আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণ সময়ে মেসের কাজের লোকেরা রান্না, বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কারের কাজগুলো করলেও, ঈদের ছুটিতে তারা গ্রামে চলে যান। ফলে মেসে থাকা মানুষেরা নিজেদের কাজ করতে হয়, যা অনেকের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। যারা রান্না করতে জানেন না, তারা একদমই খাবার বানাতে পারেন না, আবার অনেকেই বাধ্য হয়ে শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেন। আমি একটি মেসে থাকি। প্রতিদিন দুপুরে বাইরে খাই, রাতে খাবার আসে। ঈদের সময় সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ, অনেক খুঁজে খুঁজে দূরে একটা রেস্টুরেন্ট পেলাম। আবার রাতের খাবারের কী হবে, তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। পুরো ঈদের সময়টা এভাবেই কাটাতে হবে, এটা বেশ কষ্টকর। ঢাকায় ঈদ করেছেন শিক্ষার্থী নোবেল। তিনি বলেন, আজকে দু-একটা রেস্টুরেন্ট খোলার খবর পেলাম। কিন্তু গত দুই দিন সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। বুয়া তো ঈদের আগেই চলে গিয়েছিল। অনেক সমস্যা হয়ে গেছে। এছাড়া গৃহস্থালীর কাজের লোকেরা ছুটিতে চলে যাওয়ায় শুধু ব্যাচেলরদের নয়, অনেক পরিবারেও ভোগান্তি বাড়ে। বিশেষ করে যারা রান্না করতে পারেন না বা সময়ের অভাবে রান্না করতে চান না, তাদের জন্য এই সময়টা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বাসার গৃহকর্মী না থাকায় রান্নার পাশাপাশি বাসা পরিষ্কার, কাপড় ধোয়া, এমনকি অন্যান্য দৈনন্দিন কাজও তাদের করতে হয়, যা অনেকের জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যায়। অনেকে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে চান, কিন্তু ছুটির সময়ে ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সীমিত সেবা দেয়। যারা খোলা থাকে, তারা অতিরিক্ত চার্জ নিয়ে খাবার সরবরাহ করে, যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। ফলে বেশিরভাগ ব্যাচেলরদেরই একপ্রকার বাধ্য হয়ে স্বল্প খেয়ে বা অনাহারে ঈদের ছুটি কাটাতে হয়। 
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় চাইনিজ নিউ প্লাজা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সংস্কার কাজ চলছে। এক শ্রমিক জানান, ঈদ উপলক্ষে হোটেল কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ সংস্কার কাজ করছে। আগামীকাল কিংবা পরশু থেকে রেস্টুরেন্ট চালু হবে। শুধু চাইনিজ নিউ প্লাজা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নয়, ফার্মগেট এলাকায় বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্টই বন্ধ রয়েছে। তাই বিপাকে পড়েছেন অনেকেই। তবে রাজধানীর আজিমপুর, লালবাগ, হাজারীবাগের চিত্র এক্ষেত্রে ভিন্ন। এই এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায় অধিকাংশ হোটেল খোলা রয়েছে। তবে বেশকিছু হোটেল বন্ধও রয়েছে। আজিমপুর ইরাকি মাঠে সংলগ্ন একটি বাসায় ব্যাচেলর থাকেন জহিরুল। ঈদ ছুটি শেষে শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, বাসায় যে রান্না হবে সেই জোগাড় নেই। খালা (কাজের লোক) ছুটিতে। আরও দুই দিন পর আসবেন। এদিকে পাড়ার অধিকাংশ হোটেল বন্ধ। বৃহস্পতিবার রাতে দূরে গিয়ে খেয়ে আসছি। আজ দেখি কই যাওয়া যায়। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রোকসানা ইয়াসমিন। থাকেন আজিমপুরে। তিনি বলেন, সব বন্ধ তাই চাল আর ডিম কিনেছি। কলা-রুটি খেয়ে আর কতদিন থাকা যায়। চাকরির পরীক্ষা থাকায় ইদের দুইদিন পরই ঢাকায় এসেছি। কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা সিসুল বলেন, আমার বাড়ি জামালপুর। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করি। থাকি কলাবাগানের একটি মেসে। প্রতিবার ঈদে বাড়ি গেলেও এবার যাওয়া হয়নি। ঈদের দিন থেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় খাওয়া-দাওয়া করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
অধিকাংশ খাবারের হোটেলে রান্না বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পরিবার থেকে বাইরে থাকা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বিশেষ করে খাবারের কষ্ট আছেন মাইক্রোবাস অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার, রিকশা চালক, মেছ-হোস্টেলে থাকা ব্যাচেলর দিনমজুর, শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা। খাবারের সংকটে পড়াদের মধ্যে একজন অ্যাম্বুলেন্স ফারুক হোসেন। কুষ্টিয়া থেকে ভাড়া নিয়ে ঈদের আগের রাতে এসেছেন ঢাকায়। তিনি জানান, কুষ্টিয়া থেকে ভাড়া নি (নিয়ে) আসার সুমা (সময়) চাইড্ডি ভাত খাইছিলাম। কাইলকি থেইকি ভাতই জুগাড় করতি পারলাম না। ভাতের হোটেল টোটেল খোলা পাচ্ছিনে। ঈদের দিন দেখলাম কারা জানি পথের ছাওয়াল-পাওয়ালগেরে (ছেলে-মেয়েদের) খাবার দিচ্ছে। ওগুলা চায়ি (চেয়ে) খাওয়া আমার দ্বারা সুম্ভব (সম্ভব) না। তাই কলা বিস্কুট, চা-রুটি ইডা উডা খুঁজি খুঁজি কিনি খাচ্ছি। কী করবো পেটের দায়। পেট কী মানতে চাই খাবার ছাড়া। মোহাম্মদপুর এলাকায় রিকশা চালান সিদ্দিক হাওলাদার। হোটেল খোলা না পেয়ে পেরেশানিতে সিদ্দিক। তিনি বলেন, আমি তিন বেলা ভাত খাওয়া মানুষ। পায়ে প্যাডেল করা রিকশা চালান লাগে। কাঁড়ি কাঁড়ি শক্তির দরকার। আশপাশ দিয়ে ভাত খাওয়ার হোটেল পাইলাম না। কোথাও ভাত পেলেই খেয়ে নেব। আড়াই বছর হলো বিশ্ববিদ্যালয় পড়া শেষ হয়েছে তামজিদ আকবরের। চাকরি হয়নি এখনও, তাই এক প্রকার লজ্জায় বাড়ি যাওয়া হয়নি তার। তামজিদ বলেন, অনেকে ভাবছে ঈদে বোধ হয় সবাই ঢাকা থেকে বাড়ি গেছে। কিন্তু না, বহু মানুষ ঢাকায় আছে। এই যেমন আমি মেছে থাকি। বুয়া নাই, ছুটিতে গেছে। রুমমেট-হোস্টেলমেটরা কেউ নেই। রান্নাটাও পারি না। মোটামুটি শুকনা খাবার খেয়েই থাকছি। ঢাকায় ফুপুর বাসা ছিল তারাও বাড়িতে। ভাতের হোটেল খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। হোটেল খোলা না থাকায় ঈদের আগের দিন থেকে ভাত খাওয়া বন্ধ। এ বিষয়ে কথা হয় রাজধানীর তোপখানার একজন হোটেলের মালিক বলেন, হোটেল যেসব কর্মীরা চালায় তারা সারা বছর মানুষকে খাওয়ানোর কাজই করে। ঈদের সময় তাদের ছুটি দিতে হয়। তারা না থাকার কারণে রান্না বন্ধ। এ সুযোগে হোটেল মেরামত করছি। শুধু আমি একা না প্রায় সব হোটেল মালিক একই কাজ করে। আর যারা গলিতে হোটেল চালায় তারা দু একটা খোলা রাখে বাড়ি না গেলে। বাকি প্রায় সবাই বন্ধ রাখে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স